নাক, কান, গলা রোগের অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করেই চলেছেন মেহেরপুরের গাংনীর হিজলবাড়িয়া গ্রামের নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি। বিনা অপারেশনে অশ্ব, নাকের পলিপাস চিকিৎসা ও ফিজিও থেরাপির নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তার চিকিৎসায় অশ্ব ও পলিপাসের রোগীরা কিছুদিন ভালো থাকলেও পরবর্তীতে একই সমস্যা বড় আকার ধারণ করছে। এছাড়াও নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা। তখন এই রোগীকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অন্য চিকিৎসকের কাছে।
নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি ইতোমধ্যে গাংনীর সীমান্ত ঘেষা হাটবোয়ালীয়া বাজারে এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে রোগীদের সাথে প্রতারণা করেই যাচ্ছেন। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগ রয়েছে, নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে তার নিজ গ্রাম গাংনী উপজেলার হিজলবাড়িয়া গ্রামে ওষুধের দোকান দেন। নামের আগে ডাক্তার লিখে বিভিন্ন রোগের পারদর্শী চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন। সেখানে মেয়াদ উর্ত্তির্ণ ও অবৈধ ঔষুধ বিক্রয়ের অপরাধে গ্রামের লোকজন তাকে গ্রামে চিকিৎসা করা বন্ধ করে দেন। তাছাড়াও মাদক সেবন ও বিক্রির গুঞ্জনও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অশ্ব পায়ু পথের রোগ তাই অনেকেই গোপনে চিকিৎসা নেন। এরই সুযোগ নিয়েছেন নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি। নিয়মিত ওষুধ সেবন করে মানুষ আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এক রোগ সারাতে গিয়ে তারা নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিপিটি সার্টিফিকেট না থাকলেও ফিজিও থেরাপি দিচ্ছে। কিন্তু মানুষের সাথে প্রতারণা করা ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। তাই গ্রামের সাধারণ ভুক্তভোগীরাও অভিযোগ করার সাহস করেনা।
গ্রামের লোকজন তার এ অপকর্ম প্রচার করায় এ্যানি তার শশুরবাড়ি আমতৈল গ্রামের পাশে আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়াতে এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে বসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাংনী উপজেলার বাদিয়াপাড়া গ্রামের পাইলস্ এর রোগী বলেন, আমার পাইলসের সমস্যা নিয়ে হাটবোয়ালিয়া বাজারের এসএফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাঃ নুরুন নবী ছামাদ এ্যানির কাছে গেলে তিনি ঔষুধ দিয়ে অপারেশন ছাড়ায় সেরে দেওয়ার কথা বলেন। আমিও তার কাছে চিকিৎসা নিয়েছি কিন্তু পাইলস্ সমস্যা সারেনি বরং বেশি হয়েছে।
আমতৈল গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, পাইলসের জন্য চিকিৎসা নিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। অপারেশন ছাড়ায় সেরে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু প্রথমে কিছুদিন ভালো ছিলাম তারপর আবারও একই সমস্যা। আমি ডাক্তারকে বলেছি তিনি বলেছেন আবারও চিকিৎসা করাবেন।
ভোলাডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধু স্বর্ণালী জানান, আমার মেয়ের পলিপাসের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে ভালো হয়নি, প্রতিবেশি এক ভাইয়ের ছেলেরও সারেনি। এখন আমরা গাংনীতে চিকিৎসা করাবো। একই অভিযোগ আলমডাঙ্গা উপজেলার খোরদ গ্রামের মকলেছের স্ত্রী হিরা মনির।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুন নবী ছামাদ এ্যানি বলেন, আমি সব ধরণের রোগীর জিবি প্র্যাক্টিস করি। আমি উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। ডাক্তার লিখতে পারিনা তার পরও পরিচিতির জন্য লিখি। সব ধরনের রোগের চিকিৎসা করি তবে নিয়মের মধ্যে অশ্ব ও পাইলসের চিকিৎসা করাতে পারি না। গরীব লোকদের জন্য করতে হয়। বিপিটি সার্টিফিকেট নেই, অন্য একজনকে দিয়ে থেরাপি দেয়। শতভাগ নিয়ম মেনে কাজ করা সম্ভব হয় না। মাদকের বিষয়ে ষড়যন্ত্র করে কেউ এগুলো বলতে পারে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি সাব অ্যাসিস্টেন্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) হিসেবে পলিপাস, অশ্বর চিকিৎসা করতে পারেন না। এবং নামের আগে ডা: লিখতে পারবেন না। এস এফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে আমি এটার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।