তৃতীয় ধাপে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর ও সরাইল উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার সকাল ৮টা থেকে ৩১৮টি কেন্দ্রে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
জালভোট দেয়ায় যুবকের ৬ মাসের জেলঃ
ভোট গ্রহণ শুরু হতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে আলাউদ্দিন (২৭) নামে এক যুবক জাল ভোট দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন।
আলাউদ্দিন ওই ইউনিয়নের টিঘর গ্রামের হিরা মিয়ার ছেলে। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
জানা গেছে, ভোটগ্রহণ শুরুর পর সকাল ৯টায় পানিশ্বর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী লায়েছ মিয়ার ‘তালা’ প্রতীকে জাল ভোট দিতে টিঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে যান আলাউদ্দিন। তিনি ইদ্রিস মিয়া নামে এক ভোটারের ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আলাউদ্দিনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করেন।
আরো জানা গেছে, এরপর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাফফাত আরা সাঈদ তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া তাকে ৬ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সরাইল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, ওই যুবক অন্য একজনের ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন।
প্রবাসী বাবার ভোট দিতে এসে ছেলে আটকঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে প্রবাসী বাবার ভোট দেয়ার সময় পারভেজ আহমেদ (২০) নামে এক যুবককে আটকের পর ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সাজাপ্রাপ্ত পারভেজ উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারামপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।
রবিবার দুপুরে উপজেলার মুক্তারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তাকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, ইউপি নির্বাচনে প্রবাসী বাবার ভোট দিতে বুথে প্রবেশ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন ওই যুবক। পরে ঘটনাস্থলে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট তাকে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৭২ ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
নৌকায় ‘ওপেন ভোট’ হতে হবে: প্রিসাইডিং অফিসারকে হুমকিঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে একটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে ওপেন ভোট নিতে হবে দাবি করে প্রিসাইডিং অফিসারকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মুজিবুর রহমান সওদাগরের বিরুদ্ধে।
রবিবার সকালে লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, রবিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে ওই কেন্দ্রে আসেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মুজিবুর রহমান সওদাগর। কেন্দ্রটিতে সকাল থেকেই ভোটারদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। কেন্দ্রে এসেই চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে ওপেন ভোট নেওয়ার জন্য কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আবুল খায়েরকে চাপ দেন মুজিবুর রহমান। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে হুমকি দেন মুজিবুর রহমান। এ নিয়ে কেন্দ্রে হট্টগোল হলে পুলিশ এসে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তবে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মুজিবুর রহমান সওদাগরের মোবাইলে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
হাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আবুল খায়ের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসে ওপেন ভোট নেওয়ার জন্য আমাকে চাপ দেন। আমি রাজি না হয়ে গোপন কক্ষে ভোট দেওয়ার কথা বললে- তিনি বলেন আমি প্রিসাইডিংয়ের বাপ। পরে আমি কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্সের ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শক কাজী মাসুদ ইবনে আনোয়ার বলেন, ‘প্রিসাইডিং অফিসার ফোন পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রে আসি। কেন্দ্রে এসে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ব্যক্তিকে পাইনি। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট চলেছে।’
নবীনগরে ৩টি কেন্দ্রে নির্বাচনী বুথ খোলা আকাশের নিচেঃ
তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নে ৩টি কেন্দ্রে নির্বাচনী বুথ খোলা হয় খোলা আকাশের নিচে। ভোটারদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে ২টি অস্থায়ী বুথ স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিলখী উত্তরপাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আল আমীন খান। তিনি জানান, এই কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ১৩৫৭। নির্বাচন কমিশন এই কেন্দ্রে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ৪টি বুথ স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু টিনশেড ছোট এই মাদ্রাসাটিতে ৪টি বুথ স্থাপনের জায়গা নেই। গত শনিবার রাতে খোলা আকাশের নিচে চাদোয়া টাঙিয়ে ২টি অতিরিক্ত বুথ তৈরি করা হয়েছে।
জানা যায়,কেন্দ্রটিতে পুরুষ ভোটার ৬৭৬ জন ও নারী ভোটার ৬৮১ জন। তাদের মধ্যে কৈবর্ত পাড়ার ২৯৮ নারী ভোটারের জন্য ও নিলখী প্রথম অংশের ৩৮৩ নারী ভোটারদের জন্য ২টি পৃথক অস্থায়ী বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
আরো জানা যায়, এই কেন্দ্র ছাড়াও একই ইউনিয়নের আরও ২টি কেন্দ্রে খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী ৩টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। এর মধ্যে বাড্ডা হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে খোলা আকাশের নিচে ২টি ও বাড়াইল মধ্যপাড়া ফুরকানিয়া হেফজুল মাদ্রাসা কেন্দ্রে একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
বাড্ডা হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ২৮৫ জন ও বাড়াইল মধ্যপাড়া ফুরকানিয়া হেফজুল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটার ১৪০৩ জন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে,সারা দেশে তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অংশ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মোট ১৪১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ছাড়া, ৩২ ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য পদে ১ হাজার ১৯ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ২৯৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৩ স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নির্বাচনে শৃঙ্খলা রক্ষায় ১২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। নিরাপত্তা পরিকল্পনায় ৩১৮টি ভোটকেন্দ্রে ডিউটি, ৩২টি মোবাইল টিম, ২৭টি স্ট্রাইকিং টিমসহ অন্যান্য ডিউটিতে মোট ১ হাজার ৪৫০ পুলিশ সদস্য ছিলে। এ ছাড়াও, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।